Sunday, February 5, 2012

ধর্ম শিক্ষককে নিয়ে সবাই হাসাহাসি ...........

৯৫-৯৬ সালের দিকের কথা। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর কিছুদিন গ্রামে ছিলাম। স্থানীয় হাইস্কুলের ধর্ম শিক্ষককে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করলেও (উনি ক্লাসে ঘুমান, ইত্যাদি) উনি আমাকে বেশ স্নেহই করতেন। এলাকা সুত্রে উনি আমার চাচা।
তো দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। চাচা একগাদা পরীক্ষার খাতা দেখছেন বাইরের দাওয়ায় বসে। আমি ঘুরতে ঘুরতে সেখানে হাজির। আমাকে দেখে উনার চোখে মুখে দিব্য হাসি। ভাবলাম অনেকদিন পর দেখা তাই হেসে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। খুশি হয়ে আরো এগিয়ে গেলাম। কিন্তু পরে বুঝলাম ঘটনা অন্য। মাঠে ধানকাটা চলছে। উনি যদি একটু মাঠে না যান তাহলে কামলারা ফাঁকি দিতে পারে। কিন্তু পরীক্ষার খাতা দেখাও জরুরী। তাই আমি যদি একটু দেখে দেই …
- কিন্তু আমিতো জানিনা সিলেবাস কি, বা কোন স্টান্ডার্ড এ মার্কিং হবে। বা এ বিষয়ে তো আমার জ্ঞান ও সীমিত। আমি কীভাবে মার্কিং করব?
- বাতিজা, এত চিন্তা করিওনা। এক ফৃস্টা লেখা দেইকলে ৩ নম্বর আর দুই ফৃস্টা দেইকলে ৪ নম্বর দিবা।
আক্কেলগুড়ুম হয়ে আমি ও খাতা দেখতে বসলাম।ক্লাস সিক্স এর ধর্ম পরীক্ষা। শুধু পৃষ্ঠা দেখে নম্বর দিতে আমার মন সায় দিলনা। তাই একটু পড়ার চেষ্টা করলাম।
প্রশ্নঃ হুদাইবিয়া সন্ধি সম্পর্কে কি জান লিখ।
বেশির ভাগ উত্তর ই মোটামুটি হুদাইবিয়া নিয়ে আমি যা জানি সেরকম ই। তবে দুই জনের উত্তর পত্রের দিকে চোখ আটকে গেল।
মোহাম্মদ রফিক আলম লিখেছেঃ
হুদার যখন বিয়া হল তখন বউ নিয়ে ঘরে এল। সবাই নতুন বউএর খুব প্রসংসা করল। আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এই বিয়াকে একটি নেয়ামত হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন বিয়া হইলে হুদার বিয়ার মতই বিয়া হউয়া উত্তম। আমাদের ও এই ঘটনাটিকে আল্লাহর নেয়ামত হিসাবে নিয়ে তাকে অনুসরণ করা কর্তব্য…
এরকম করে মোটামুটি দেড় পৃষ্ঠা। চাচার নম্বরের হিসাব অনু্যায়ী আমাকে মোটামুটি সাড়ে তিন দিতে হয়। কিন্তু আমি বুঝতে না পেরে খাতাটি একপাশে সরিয়ে রাখলাম।
ফরিদা ইয়াসমীন এর উত্তরঃ
হুদাই বিয়া হল হুদাহুদি বিয়া। আরবের সেইসময়ে মহিলাদের কোন ইজ্জত ছিলনা। তাদের পুড়াইয়া মারা হইত। রাসুল (সঃ) এই ব্যাপারটি সহ্য করতে না পাইরা কিছু কিছু সম্ভ্রান্ত মহিলাদের হুদাহুদি বিয়ার ব্যবস্থা করেন। ইহার ফলে তাহাদের পুড়াইয়া মারার ঘটনা বন্ধ হইয়া যায়…
এটাও মোটামুটি এক পৃষ্ঠা। আমি মোটামুটি হতবুদ্ধি হয়ে কিছুক্ষ্ণ বসে রইলাম। আমাকে উদ্ধার করতে আল্লাহ এই সময়ে চাচীকে পাঠালেন।
উনি থালা ভর্তি জলপাই এর আচার এনে আমার সাথে গল্প করতে বসলেন।

No comments:

Post a Comment