(১) অবাধ্যতা
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
“আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল যখন কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণাকরেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও কোনো মুমিন নারীর তাদের সে ব্যাপারে নিজেদের কোনো রকমএখতিয়ার থাকবে না - (যে তারা তাতে কোনো রদবদল করবে); যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলেরনাফরমানী করবে, সে নিসন্দেহে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।“ (আল-আহযাব ৩৬)
“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামেরআগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।“ (সূরা জ্বিন ২৩)
“রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরতথাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।“ (হাশর ৭)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”আর
আমি যাকিছু নিষেধ করেছি তা থেকে বেঁচে থাকো“ [৩]
হযরত আমর ইবন শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “
বার্ধক্যে(সাদাচুলকে) উপড়ে ফেলো না। কেননা তা কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য আলোকবর্তিকা হবে”
।(তিরমিযি, আবু দাউদ, রিয়াদুস সালেহিন ১৬৪৬)
“যে আমার সুন্নাহ‘র বিরাগভাজন হয়, তার আমার সাথে কোন লেনদেন নেই।“ (বুখারী, ৪৬৭৫)
দাড়ি কিংবা মাথা থেকে চুল উপড়ে ফেলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে, যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে সেকালো কিংবা সাদা উভয় প্রকার চুলের বৃদ্ধিকেই অপছন্দ করে থাকে,অথচ সাদা দাড়িকে কিয়ামতের দিন মুসলমানেরজন্য নূর হিসেবে বলা হয়েছে। ইমাম গাযযালী এবং ইমাম নওয়াবী (রাহিমাহুল্লাহ) উভয়ে বলেছেন, “যখন দাড়ি গজাতেশুরু করে তখন তা উপড়ে ফেলা হল মুরদ’দের [৪] সাথে সাদৃশ্য এবং একটি বড় মুনকারাত(মন্দ কাজ)”
(২) ঔদ্ধত্য ও হেদায়েতের পথ হারিয়ে ফেলা
সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, “যে
লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যেলোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করেপাঠাইনি“। (নিসা ৮০)
যেহেতু রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ (আদেশ, কাজ এবং গুণগতভাবে) বলছে দাড়ি বড় করার কথা, সেহেতু এটা কামিয়ে ফেলাহচ্ছে তাঁর সম্মানিত সুন্নাহ তথা জীবনাচরণের প্রতি একটি চরম অপমান। তিনি বলেছেন,
“যে আমার সুন্নাহরবিরাগভাজন হয় সে আমার দলভুক্ত নয়“। (মুসলিম, ৩২৩৬; বুখারী, আহমদ, নাসায়ী)
“যে কেহ এমন আমল করবে যা করতে আমরা নির্দেশ দেইনি , তা প্রত্যাখ্যাত।“ (মুসলিম)
আমাদেরকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি নি’মা (নিয়ামত) এবং মর্যাদা। নিঃসন্দেহে দাড়িকামানো সেই নিয়ামতকে অস্বীকার করে এবং যেই আল্লাহর রাসূল(সা) এর দেখানো পথ সর্বোত্তম পথ, সেই পথ থেকেবিচ্যুত হওয়াও বটে। এটা আমাদেরকে অবিশ্বাসীদের মতো স্তরেও নামিয়ে দেয় যাদের কাছে তাদের বদ কর্মগুলোসুশোভিত হয়ে দেখা দেয়; এভাবেই তাদের বিকৃত স্বভাব-প্রকৃতি আজকে তাদের বোধশক্তির এতটাই বিলোপ ঘটিয়েছেযে, তারা আজ বলছে, সভ্যতার অগ্রগতি ও অবস্থা অনুধাবনের জন্যে নারী পুরুষের বড় বাহ্যিক পার্থক্যগুলো (উদাহরণ স্বরুপ; দাড়ি) দূরীকরণ আবশ্যক !
(৩) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটানো
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। ” (রুম ৩০)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ’খালক’ শব্দটি দ্বারা মানুষের ফিতরাহ তথা স্বাভাবিক স্বভাব প্রকৃতিকে বোঝানো হয়েছে।
ফিতরাগত বৈশিষ্টের পরিবর্তন সাধন হল শয়তানের অনুসরণ এবং পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালারঅবাধ্যতা। শয়তানের এই চক্রান্ত উন্মোচন করে দিয়ে আল্লাহ বলেন,
“শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব।
তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং
তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব।
যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। ” (নিসা ১১৮-১১৯)
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবধান করে বলেছেন, ”আল্লাহ যেসব নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন যারা উল্কিঅঙ্কন করে এবং নিজেদের শরীরেও উল্কি আঁকে, এবং সেই সকল নারীদের যারা নিজেদের ভ্রু কামায় এবং যারানিজেদের দাঁতের মাঝে কৃত্রিমভাবে ফাঁক বৃদ্ধি করে যাতে তাদেরকে দেখতে সুন্দর দেখায়, তারা আল্লাহর সৃষ্টির উপরনিজেরা পরিবর্তন সাধন করে।” [৫]
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি এই অভিশাপের কারণ ব্যাখা করে বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতিসাধন করা”। এই অভিশাপ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহর সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের পরিবর্তন নিষিদ্ধ। কাজেই যেতথাকথিত ”সৌন্দর্য বর্ধন” এর জন্য তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে সে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন সাধন করে, সুবহানাল্লাহ !সমস্ত প্রশংসা তাঁরই যিনি সব ভুল ত্রুটির ঊর্ধে এবং যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন নিখুঁতভাবে।
দাড়ি কামানো ’আন-নামাস’র অন্তর্গত, যা হলো আরও বেশি ’সুন্দর’ হবার জন্যে মুখমণ্ডল থেকে চুল কিংবা মহিলাদেরচোখের ভ্রু উপড়ে ফেলা । পুরুষদের জন্যে যা অধিকতর কুৎসিত।
(৪) অবিশ্বাসীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ
আল্লাহ মহামহিম তাঁর কালামে বলেছেন, ”এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব,আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। ” (আল কুর’আন ৪৫:১৮) [৬]
এই আয়াতে পরিষ্কারভাবে তাদের থেকে পৃথক হবার কথা বলা হয়েছে যারা নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে এবংআল্লাহর রাসুলের আদেশের অনুসরণ করে না। তাদের খেয়াল খুশির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত তাদের বাহ্যিক চেহারা-সাজ পোশাকএবং তারা তাদের বাতিল জীবনাচরণের থেকে যা অন্তর্ভুক্ত করে। কাজেই তাদের খেয়াল খুশির সাথে একমত পোষণতাদের মিথ্যা বাতিল পথ অনুসরণেরই নামান্তর। আমাদের প্রতি আদেশ হল তাদের থেকে পৃথক হবার।
আল্লাহ পাক বলেন, “যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয়বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপরসুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।” (হাশর ১৬)
এই আয়াতে: “তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল”, বিজাতিদের অনুকরণের বিরুদ্ধেএকটি চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা। ইবন কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেছেন: ”এ কারণেই আল্লাহ মুমিনদেরকেনিষেধ করেছেন তাদের (অবিশ্বাসীদের) অনুকরণ করতে”।
কুর’আনের শিক্ষা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যাকিছু নাযিল হয়েছে তার অন্যতম শিক্ষা হলমুসলমানদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট রক্ষা করা। একারণেই আমাদের কথা, কর্ম, ইচ্ছা বাসন ইত্যাদি এবং শরীয়তের বিষয়াদিপর্যন্ত যেমন সালাত, জানাযা, সাওম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, পোশাক, চাল চলন, আচরণ, অভ্যাস ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেজাতীয় বৈশিষ্ট রক্ষা করার জন্যে আল্লাহর রাসূল বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এরপরেও যারা মুসলমানদের জাতিয়বৈশিষ্ট ত্যাগ করে অন্যদের অনুসরণ অনুকরণ করে তাদের প্রতি তিনি বলেছেন, “যে আমাদের সুন্নাহ পরিত্যাগ করেঅন্যদের সুন্নাহ অনুসরণ করে সে আমাদের মধ্য হতে কেউ নয়।” [৭]
মদীনার ইহুদীরা এই উদ্দেশ্যগুলো বুঝতে পেরেছিল এবং অনুধাবন করেছিলো যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতাদের থেকে সকল বিষয়ে আলাদা হতে যাচ্ছেন এমনকি একেবারে ব্যক্তিগত কোন বিষয়েও। তারা মন্তব্য করেছিলো, “আমরা যা করি তার কোন কিছুরই বিরোধীতা না করে এই লোকটি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরছাড়বে না।” [৮]
হাসান আল বাসরী বলেন, “ এমন ঘটনা খুব বিরল যে কেউ কাউকে অনুকরণ করে অথচ সে তার অনুসরণ করে না (ইহকাল এবং পরকালে)।”
সম্মানিত আনসারদের থেকে কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, “ হে আল্লাহর রাসূল! আহলে কিতাবীরা তাদের দাড়ি কামিয়ে ফেলে এবং গোঁফ লম্বা করে।” জবাবে তিনি বলেন, “তোমরা তোমাদের গোঁফছাট এবং দাড়ি ছেড়ে দাও এবং আহলে কিতাবিদের সাথে বৈসাদৃশ্য গ্রহণ কর।”
তিনি আরও বলেন,”তোমরা গোঁফগুলো কর্তন কর এবং দাড়ি ছেড়ে দাও (অর্থাৎ বড় করো)। তোমরা অগ্নিপূজকদেরবিপরীত কর”। [(মুসলিম ২,৫১০]
আরেকটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “গোঁফ ছোট কর (জুযযু) , আর দাড়ি বাড়তে দাও, এবংমেজিয়ান(পৌত্তলিক)দের বিপরীত কর।” (মুসলিম)
জুযযু (সর্বোচ্চ পরিমাণ) গোঁফ কামানো। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী বলেন, “ছেটে ফেলার অর্থ যাকিছুউপরের ঠোটের উপরে ছড়িয়ে থাকে, এবং সম্পূর্ণ গোঁফ কামিয়ে ফেলা নয়, কারণ এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামের বাস্তবিক এবং সুনিশ্চিত সুন্নাহর বিরুদ্ধাচারণ।“ একারণেই যখন ইমামমালিক(রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে যারা গোঁফ কামিয়ে ফেলে তাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনিবলেন, “আমি মনে করি সে একটি কষ্টকর যুলুম করল“। গোঁফ কামিয়ে ফেলা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “এটি একটি বিদ‘আত (ধর্মের নামে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়) যা লোকেদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে।” (আলবায়হাকী, ১: ১৫১, আরও দ্র ফাতহুল বারী ১০: ২৮৫-২৮৬)
আল-কুথা, তীরের শেষভাগের পালকগুচ্ছ। ’আল-কুথাতি বিল কুথালি’, পালকগুচ্ছ সেদিকেই যায় যেদিকে তীর ছুটেযায়। এই উপমার সাহায্যে অমুসলিমদের কাজকর্মের অন্ধ অনুকরণ অনুসরণের কথা বোঝানো হয়েছে। রাসুলুল্লাহ এইউপমার সাথে আরেকটি উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন, “তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের স্বভাবের অনুসরণ করবে, প্রতি পদেপদে, এমনকি তারা যদি কোন ধাব(গুইসাপের গর্ত) এও প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাই করবে।” আমরা (সাহাবাগণ)জানতে চাইলাম, “হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি কি ইহুদী ও নাসারাদের অনুকরণের কথা বলছেন?” তিনি বললেন, “নয়তো কারা?” (বুখারী, মুসলিম)
কেন কুফফারদের থেকে আলাদা বৈশিষ্টের হতে হবে?
আচার আচরণ এবং সাজ পোশাক হচ্ছে এমন কিছু বিষয় যা নিয়তের উপর অনির্ভরশীল। যে অন্যদের সাথেসাদৃশ্যপূর্ণ আচরণ করে সে নিজেই তাদের সাথে নিজের আচরণকে মিলিয়ে নেয়, যদিও তার নিয়ত নাওথেকে থাকে। যদিওবা তার কোন উদ্দেশ্য না থেকে থাকে তবুও সে অনুকরণের দোষে দুষ্ট হলে এরআনুষঙ্গিক প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়। আর এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুনির্দিষ্টভাবে কিছু কাজকে নিষেধ করে গেছেন যদিও তার পিছনে কোন নিয়ত বা উদ্দেশ্য নাওথেকে থাকে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনুকরণের জন্য অনুকরণ নাও করা হয়। নির্দোষভাবেও এরূপ অনুকরণকরা নিষিদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ; তিনি সূর্যোদয়ের সময়, মধ্যাহ্নে এবং সূর্য ডোবার সময়ে সালাহ আদায়েনিষেধ করেছেন, কারণ এই সময় গুলোতে মুশরিকরা সূর্যকে সিজদাহ করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালো করেই জানতেন মুসলিমরা সালাহ সূর্যকে উদ্দেশ্য করে নয়, আল্লাহকে উদ্দেশ্যকরে আদায় করে থাকে। তবুও তিনি নিষেধ করেছেন এবং বিজাতি কুফফারদের থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ আচরণএবং একইভাবে নারী-পুরুষের পারস্পরিক সাদৃশ্যপূর্ণ আচরণকে নিষিদ্ধ করে গেছেন। এর কারণ কোনমানুষ অনুকরণের দোষে দুষ্ট হলে , এক সময় সে যাকে অনুকরণ করে থাকে তার আনুষঙ্গিক কুপ্রভাব থেকেনিজেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
অমুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে দাড়ি রাখার প্রচলন
ওহী নাযিলের পূর্বে কিংবা পরেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কার আরব মুশরিকদের লম্বা দাড়িছিল (সহীহ মুসলিম দ্র, হাদীস ১৮০০-আরবী) কারণ আরবরা তাদের সৌন্দর্য শ্মশ্রুমণ্ডিত চেহারার কোন বিকৃতি সাধনকরেনি। বস্তুত, ইসলামে মুশরিকদের এই সৌন্দর্যকে স্বীকার করেছে। আরব মুশরিকরা ছিল প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীমআলাইহি সালামের সুন্নাহ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া একটি জাতি, কিন্তু তখনও তাদের মাঝে এই সুন্নাহটি চালু ছিল ।সময়ের সাথে সাথে ইসলামের অন্যান্য মূল বিষয় থেকে সরে আসলেও এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষচব্বিশ হাজার নবীর সুন্নাহ থেকে আরব মুশরিকরা পর্যন্ত সরে আসেনি।
পশ্চিমারাও তাদের দাড়ি লম্বা করত যতক্ষণ না সপ্তদশ শতকে রাশিয়ার শাসক পিটার, দাড়ি কামানোর চল ইউরোপেছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়কার কিংবা তার পূর্বেকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিজ্ঞানী, গবেষক, সভাসদ ও অন্যান্যদেরআঁকা ছবি, ভাস্কর্য কিংবা প্রতিকৃতিতে আজও তার প্রমাণ মেলে। অধিকাংশই শ্মশ্রুমণ্ডিত ছিলেন।
পরবর্তীতে, মুসলিমদের মাঝেও পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণের কারণে দাড়ি কামানোর এই কু-রীতিটির ব্যাপক প্রসারলাভ করে।
রাসুলুল্লাহর সময়কার মুশরিকদেরও দাড়ি ছিল, কিন্তু তাঁরা গোঁফ কামাতো না। মুসলিমরা তাদের থেকে আলাদা হলেন,মুসলিমরা ঠোটের উপরের গোঁফ ছাঁটতেন এবং দাড়ি ছেড়ে দিলেন, যেখানে মুশরিকরা তাদের দাড়ি ছোট করে রাখতসেখানে মুসলিমরা তাদের দাড়ি ছেড়ে দিলেন। এভাবেই সত্যানুসারীরা তাদের থেকে আলাদা হলেন যারা শিরকে লিপ্তএবং পথভ্রষ্ট।
আবু শামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “কিছু লোক দাড়ি কামানো শুরু করল, এবং এটা তো মেজিয়ানদের (একটি মুশরিকসম্প্রদায়) থেকেও নিকৃষ্ট কারণ তারা তো কেবল দাড়ি ছোট করা শুরু করেছিল! ”
টীকাঃ এখানে জেনে রাখা প্রয়োজন, কিছু মুশরিকেরা দাড়ি রাখছে একারণে আমাদের মুসলিমদের দাড়ি কামিয়ে ফেলারমাধ্যমে তাদের থেকে আলাদা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ;
প্রথমত, তাদের স্বাভাবিক এবং অধিকাংশের অবস্থা হল, তারা দাড়ি কামিয়ে ফেলে এবং দাড়ি কামানোর বিষয়টি তাদেরথেকেই উদ্ভাবিত একটি বিষয়।
দ্বিতীয়ত, যে মুশরিকরা একারণে দাড়ি রাখছে যে এটা হচ্ছে পৌরুষ, অথবা তারা নবীদের অনুসরণের কারণে এটাকরছে; তাহলে বুঝতে হবে তাদের এই ফিতরাগত ব্যাপারটি সুস্থ-স্বাভাবিক রয়েছে কারণ এই ব্যাপারে আমাদের শরীয়ারসাথে তাদের শরীয়া একমত হয়েছে। কিন্তু এরপরেও তাদের থেকে আমাদের আলাদা বৈশিষ্ট প্রকাশিত হয়েছে ঠোটেরউপরের গোঁফ ছেটে ফেলার মাধ্যমে। হযরত যায়েদ বিন আকরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ”যে ব্যক্তি স্বীয় গোঁফ ছাটবে না সে আমাদের দলভুক্ত নহে।” (তিরমিযি,সহীহ) [৯]
বর্তমান কুফফারদেরও অনেকে দাড়ি রাখে (যেমন ইহুদী, শিখ) যখন অন্যরা তা কামিয়ে ফেলে। যেটাই হোক,আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যারা দাড়ি কামিয়ে ফেলে তাদের বিপরীত করতে যারা দাড়ি বড় করে তাদের বিপরীতকরতে নয়। যদি অন্ধভাবে কুফফারদের বিপরীত আচরণ করার কথা বোঝানো হত তাহলে ’খাতনা’ করাও রহিত হয়েযেত কেননা ইহুদীরাও ’খাতনা’ করে।
তৃতীয়ত, বর্তমান যুগে অধিকাংশ মুসলিম যারা দাড়ি কামিয়ে ফেলছে তারা এটা একারণে করছে না যে তারামুশরিকদের বিপরীত করছে যদিও মুশরিকদের রীতি এবং নারী-পুরুষের পারস্পরিক সাদৃশ্য গ্রহণের বিপরীতে কুর’আনও সুন্নাহর শক্ত অবস্থান রয়েছে। উপরন্তু, সুন্নাহ ফিতরাহর উপর প্রতিষ্ঠিত যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল নয়। এটাএর উপরেও নির্ভরশীল নয় যে, কিছু মানুষ এর থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে। কাজেই, এটা ঠিক নয় যে আমরাঅবিশ্বাসীদের সাথে বৈসাদৃশ্য গ্রহণের নাম করে আল্লাহর আইনের বিপরীতে করব।
(৫) নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা
বুখারী, আবু দাউদ,তিরমিযি ,নাসায়ী ও ইবনে মাজায় হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালার ভর্ৎসনা ঐ সব পুরুষদের উপর যারা মহিলাদেরসাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং ঐ সব মহিলাদের উপর যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে।” (বুখারী; ২/৮৭৪)
হযরত নাফে’ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, একদিন হযরত ইবনে উমার ও আবদুল্লাহ ইবনে আমর হযরত যুবাইর(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর কাছে ছিলেন। এমতাবস্থায় এক মহিলা ঘাড়ে ধনুক বহন করে মেষ পাল তাড়াতে তাড়াতেএগিয়ে এল। আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তাকে জিজ্ঞেস করলেন; “তুমি পুরুষ না মহিলা? সে বলল;“মহিলা”। তখন তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের দিকে তাকালে তিনি বললেন; আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবীর পবিত্র মুখদিয়ে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী মহিলাদেরকে এবং মহিলাদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদেরকেঅভিসম্পাত করেছেন।
কোন সন্দেহ নেই, একজন নারীর ধনুক বহনের ফলে যদি পুরুষের অনুকরণ করা হয়ে থাকে তবে একজন পুরুষেরপক্ষে দাড়ি কামিয়ে ফেলাটা আরো অধিক পরিমাণে নারীদের সাথে সাদৃশ্য বহন করে। একজন নারী যদি নকল দাড়িলাগায় তাহলে যেমন তাকে পুরুষ বলে মনে হত তেমনি একজন পুরুষ যদি স্বীয় সৌন্দর্য ও দাড়ি কামিয়ে ফেলেস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তবে তাকে তার বাহ্যিক চেহারার কথা বাদ দিলেও তার মানসিকতার কারণেই তাকে মেয়ে বলেঅনেকেরই ভুল হতে পারে।
আরো উল্লেখ্য, পুরুষ কর্তৃক নারীর এবং নারী কর্তৃক পুরুষের কন্ঠস্বর অনুকরণও এর আওতাভুক্ত। নারী যখন পুরুষেরমত আঁটসাঁট, পাতলা ও শরীরের আবরণযোগ্য অংশ অনাবৃত থাকে এমন পোশাক পরিধান করে, তখন সে পুরুষেরসাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং অভিসম্পাতের যোগ্য হয়।
আপনি যদি একজন সাধারণ আহলে সুন্নাহ’র অনুসারী মুসলিমকে জিজ্ঞেস করেন, “দাড়িবিহীন চেহারার পুরুষের সাথেকাদের মিল বেশি?” সে উত্তর করবে, “মহিলা, নাবালক অথবা ইহুদী, খৃষ্টান”। আলেমগণ এই মিলকে বলেছেন’আত-তাখান্নুথ’ (effeminateness)। বিখ্যাত আলেম ইবন আবদুল বার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “দাড়ি কামানো হারাম,শুধুমাত্র মেয়েলি স্বভাবজাত পুরুষেরাই তা করতে পারে।”
(৬) অঙ্গহানির অপরাধ (act of mutilation)
ইমাম আহমাদ, আস-সাওরি এবং আবু হানিফা একমত পোষণ করে বলেন যে, যদি কারো দাড়ি মুণ্ডন করে দেয়া হয়হয় তবে এটি একটি অঙ্গহানির অপরাধ এবং সে ব্যক্তিকে পূর্ণ ’দিয়াহ’ অথবা ’রক্ত মূল্য’ পরিশোধ করতে হবেযেমনিভাবে বাদীকে তার চোখ কিংবা হাত হারানোর জন্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ’রক্ত মূল্য’ দেয়া হয়।
ইমাম বুখারী হতে বর্ণিত , “নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডাকাতি এবং জোর জবরদস্তি করে অন্যের সম্পদছিনিয়ে নেয়া এবং অঙ্গহানিকে নিষেধ করেছেন”
ইবন হাজম বলেন, “তারা (মুসলিম আলেমগণ) একমত যে, দাড়ি কামানো একটি অঙ্গহানি, যা হারাম।” উপরন্তু, দাড়িকামানো হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের অবাধ্যতা এবং তা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা, কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে আমাকে মান্য করল সে আল্লাহকে মান্য করল, আর যে আমাকে অমান্য করল সে আল্লাহকেঅমান্য করেছে।” (বুখারী)
ইবনে তাইমিয়া, একজন বিখ্যাত মুজাদ্দিদ (পুণর্জাগরণকারী), আলেম এবং মুজাহিদ, তিনি বলেন, “দাড়ি কামানোহারাম- কোনো আলেম দাড়ি কামানোর অনুমোদন করেনি।”
এ সম্পর্কে আমাদের এই আয়াতটি স্মরণ করা উচিত যেখানে আল্লাহ, মহাপবিত্র ও মহামহিম বলেন, “আমি যখনইকোন রাসূল পাঠিয়েছি তাকে এজন্যেই পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার শর্তহীন আনুগত্য করা হবে।”(নিসা ৬৪)
[১০] দাড়ি লম্বা করার এই আদেশটির মর্যাদা এতটাই ছিল যে, দীন ইসলামের সবচেয়ে বড় আলেমগণ ইমাম আবুহানিফা, আহমাদ, আস-সাওরি বলেছেন, “যদি কারো দাড়ি ’আক্রান্ত’ হয় পুরোপুরি মুণ্ডন করার দ্বারা, এবং তা আরবেড়ে না উঠে, তাহলে দুষ্কৃতকারীকে এর পূর্ণ মূল্য (দিয়াহ) দিতে হবে, যেন সে দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকে হত্যা করেছে।”ইবন আল মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) ব্যাখা করে বলেন যে, “এটা এ কারণে যে, দুষ্কৃতকারী দাড়ি বেড়ে উঠার সমস্তকার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে। এটা সেই অপরাধের সমান যা আমরা কারো দৃষ্টি ছিনিয়ে নিলে বিবেচনা করি।”
(৭) স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃতি ঘটানো
আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ আল আনসারী বর্ণিত, “ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন-নুহবা এবং আল-মুথলানিষেধ করেছেন।” [১১]
সুমরাহ এবং ওমরান বিন হুসেইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, “প্রত্যেক খুতবায় নবীজী আমাদেরকে দান করতে ওআল-মুথলা(আকার বিকৃতি) থেকে বেঁচে থাকার কথা না বলে শেষ করতেন না।” [১২]
ইবন আস শাকির হতে বর্ণিত, ওমর বিন আব্দুল আযিয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “দাড়ি কামানো হল মুথলা এবং নবীরনিষেধ করা কাজের একটি হল মুথলা”।
ইমাম ইবন হাজম রাহিমাহুল্লাহ , তাঁর বই ’মারাতিব আল-ইজমা’ (ঐক্যমতের স্তর) এ উল্লেখ করেন,” তাঁরা (আলেমগণ)একমত হয়েছেন যে, দাড়ি কামানো হল মুথলা এবং এটা অননুমোদিত।”
আলেমগণের কেউ কেউ দাড়ির ছেটে ছোট করাকে মুথলা বলেছেন, অনেকে গোঁফ কামিয়ে ফেলাকে মুথলা বলেছেন।একবার ভেবে দেখুন, সম্পূর্ণ দাড়ি কামিয়ে ফেলার মত অবস্থা সৃষ্টি হলে আলেমগণের বক্তব্য কি হতো? চেহারা হলমানুষের শরীরের সবচেয়ে সুন্দরতম অংশ এবং সৌন্দর্যের কেন্দ্র। চেহারা একটি সম্মানিত অংশ, একারণেই রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় সে যেনচেহারাকে এড়িয়ে চলে” আরেকটি বর্ণনায়, “সে মুখে আঘাত করবে না”। [১৩]
সুয়ায়েদ বিন মিকরিন একজন লোককে দেখলেন যে তার ছেলেকে মুখে আঘাত করছে (চড় মারছে), তিনি বলেন, “তুমিকি জানোনা যে সুরাহ (চেহারা) সম্মানিত?” (মুসলিম)
কি অদ্ভুত আজকের সমাজে আমাদের আচরণ যখন আমরা তাদের শেভ করা মসৃণ গাল দেখে অভিনন্দন জানিয়ে বলি, “কি মসৃণ !” ( আরবিতে Na’eeman)
সমাজের নিকৃষ্ট লোকেরাও দাড়ি কামাতে লজ্জা বোধ করত !
এটা সহজেই অনুমিত যে প্রথম যুগের মুসলিম আলেমগণের কেউই কোনোদিন দাড়ি কামাননি। একবারও নয়।তৎকালীন মুসলিম শাসকেরা যাদের অনেকেই জাহেল ছিলেন তারা পর্যন্ত কোন দুষ্কৃতিকারীকে শাস্তি দিতে হলে তারদাড়ি কামিয়ে দিতেন এবং গাধা বা অন্য কোন পশুর পিঠে চড়িয়ে শহরময় ঘুরিয়ে আনতেন, সেই নিচু লোকগুলো পর্যন্ততাদের দাড়ি কামানো চেহারা দেখানোর এই শাস্তিকে খুবই লজ্জাজনক মনে করত ! কেননা, দাড়ি কামানো; এটা হচ্ছেমেয়েলি একটা স্বভাব। এই জন্যেই অনেক আলেম মতামত দিয়েছেন, “কাউকে লঘু শাস্তি দিয়ে সঠিক পথে ফিরিয়েআনতে হলে তার মাথা কামিয়ে দাও কিন্তু দাড়ি কামিও না।” কারণ, প্রকৃতপক্ষে দাড়ি কামানো হারাম । আমরা কি দেখিনা, যখন ইহরামের সময় শেষ হয়ে আসে তখন সুন্নাহ হচ্ছে মাথার চুল কামিয়ে ফেলা কিন্তু তখনও দাড়ি কামানো নয় !সালফে সালেহীনগণের কঠোর অবস্থান ছিল সেই সকল লোকের সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে যারা কিনা নিজেদের দাড়িকামিয়ে ফেলত। তাদেরকে অবিশ্বস্ত লোকে বলেই ইসলামে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দুসুকী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “একজন পুরুষের দাড়ি কামানো হারাম, আর যে এটা করে তাকে অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।”
লক্ষ্যণীয়, ‘আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন ঘটানো‘র মাঝে ফিতরাগত বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত নয়। উদাহরণ; নখ কাটা,হজ্জের সময় মাথার চুল ফেলে দেয়া এবং বগল ও ব্যক্তিগত স্থানের চুল কাটা, খতনা করা ইত্যাদি। এসকলক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটানো মানে ’আলাহর সৃষ্টির পরিবর্তন‘ নয়। কারণ এগুলো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই অনুমতিদিয়েছেন।
[৩] মুসলিম; বুখারী, ৯ম খণ্ড, ৩৯১
[৪] বয়সন্ধিকালীন বালক
[৫] বুখারী, ৭ম খণ্ড, ৮২২
[৬] তাফসীর আত-তাবারী অনুসারে
[৭] হাসান, সহীহ আল জা’মে ৫৪৩৯
[৮] মুসলিম, হাদীস ৫৯২
[৯] [আহমাদ, তিরমিযি, নাসায়ী] শায়খ আলবানী একে সহীহ বলেছেন।
[১০] http://www.islamqa.com/en/ref/98500 শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ
[১১] বুখারী, ৭ম খণ্ড, ৪২৫
[১২] হাদীসটি হাসান
[১৩] বুখারী, ৩য় খণ্ড, ৭৩৪
বইটি ডাউনলোড করে বিস্তারিত পড়ুন :- http://www.mediafire.com/?79ij16h7k7fj9pi